সমর্থ স্বায়ত্তশাসন

খাদ্য এবং জীবন-জীবিকার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রভৃতি মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলি অর্জনে সহায়তাই আমাদের লক্ষ্য। একাজে স্থানীয় সরকারগুলির ভূমিকা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেইজন্য আমরা এই সরকারগুলিকে সহভাগী, ন্যায়নিষ্ঠ, দক্ষ ও সর্বব্যাপী এবং সত্যার্থে শক্তিশালী মানুষের সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করি।

তাই আমরা সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলির পক্ষে কাজ করি; যাতে ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কার্যক্রম জন-সমূহ বা কমিউনিটির নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর প্ৰয়োজন এবং অবস্থার প্রেক্ষিতে তা ধাপে ধাপে রাজ্য থেকে কেন্দ্র হয়ে বৈশ্বিক স্তরে পৌঁছোয়।

নাগরিক সমাজ এবং পঞ্চায়েতের ভাগিদারী

ভারতে ৭৩ তম সংবিধান সংশোধনে প্রণীত পঞ্চায়েতী-রাজ ব্যবস্থায় দারিদ্র্য মোচনে এবং গ্রামোন্নয়নে এক সক্রিয় সংস্থা হিসেবে পঞ্চায়েতের প্রসার ঘটানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার হিসেবে পঞ্চায়েতের ওপর বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণের দায়িত্ব বর্তেছে। কিন্তু তাদের এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য সম্পদ সংগ্রহ এবং তার সুষ্ঠূ ব্যবহারের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তৃণমূলে গণতন্ত্র প্রসারের যে দূরদৃষ্টি নিয়ে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল, তা এখনো অর্জন করা যায়নি। তবে পথ চলা শুরু হয়েছে। আর তাই এখান থেকেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আগামী প্রজন্মকে হাল ধরতে হবে ।

অন্যদিকে, মূলস্রোতের সহভাগী গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গুলিকে শক্তিশালী করতে আদর্শগতভাবে বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও গুলির অণুঘটকের ভূমিকা পালন করা উচিত। আর তাদের সহায়কের ভূমিকা হওয়া উচিত সাময়িক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সংস্থাগুলি বাইরের অর্থে বলিয়ান হয়ে একটা ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। তারা অনেক ক্ষেত্রেই গণতান্ত্রিক পথে নির্বাচিত সংস্থাগুলিকে এড়িয়ে যায় বা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে খর্ব করতে চায়। আমরা লক্ষ্য করছি, এই মানসিকতার জন্য এনজিওগুলি কখনই তৃণমূল স্তরের নির্বাচিত সংস্থার সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করতে পারে না। ফলে তাদের কাজ সুস্থায়ীও হয় না।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন এবং এনজিওদের উন্নয়ন কৌশল

অ্যাহেড ইনিশিয়েটিভস বিশ্বাস করে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকান্ড সংগঠিত করতে পারলে তা সুস্থায়ী হয়। তাই আমরা এই ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহায়কের ভূমিকা পালন করি।

অ্যাহেডের লক্ষ্য হল, স্বায়ত্বশাসনের মূল কেন্দ্র পঞ্চায়েতী-রাজ ব্যবস্থার স্বশক্তিকরণ। আমরা দেখেছি মানুষের উন্নয়নের জন্য পঞ্চায়েতে নানা কর্মসূচি, প্রকল্প, পরিষেবা খাতে অর্থ এবং সম্পদ বরাদ্দ হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, গ্রাম পঞ্চায়েতের অভিজ্ঞতার অভাবে এবং অসচেতনতার কারণে সাধারণ মানুষ এইসব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এইসব ক্ষেত্রে দক্ষতা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা পঞ্চায়েতী-রাজ ব্যবস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করি।

কর্পোরেটের সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রসার

কর্পোরেট ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন শাসন ব্যবস্থার যৌথ উদ্যোগ

উন্নত দেশগুলিতে কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) বা কর্পোরেটের সামাজিক দায়বদ্ধতার কার্যক্রমে, মূলত সুস্থায়ী পরিবেশ, তাদের ব্যবসায়িক নীতি এবং প্রক্রিয়া এবং সামাজিক সমস্যাগুলি ওপর জোর দেওয়া হয়। কারণ সে দেশগুলিতে এই সমস্যাগুলিই তাদের ব্যবসার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে। কিন্তু ভারত সরকার সার্বিক গ্রামোন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূর করার কাজে কর্পোরেটকে অংশীদার হতে বলে।

তবে, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি জনগণের সরকার, একথা কর্পোরেটের বোঝা দরকার। আর স্থানীয় জন সমাজের বিবিধতাকে গুরুত্ব দিয়ে, পঞ্চায়েতগুলির সঙ্গে গ্রামোন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূর করার কাজে সহভাগী হওয়ার দরকার। এনজিওগুলির স্থানীয় বিবিধতা এবং তাদের মধ্যে ঐক্যের সম্যক জ্ঞান রয়েছে। সেজন্য সিএসআর-এর কাজে এনজিও গুলিকে যুক্ত করা দরকার।

ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ

কর্পোরেট পঞ্চায়েতীরাজ সংস্থা এবং অ্যাহেড ইনিশিয়েটিভের যৌথ কার্যক্রমঃ

স্থানীয় সরকারকে সমৃদ্ধ করার কাজে কর্পোরেট এবং তার সিএসআর উদ্যোগের মেলবন্ধন আমাদের একটি অভিনব প্রয়াস। এতে একদিকে কমিউনিটি বা জন-সমূহের কাছে উপযুক্ত সুফলদায়ী সুযোগ-সুবিধা পৌঁছবে। অন্যদিকে, যে সব কাজ বেশি সংখ্যক দরিদ্র মানুষের ভাগিদারীর ফলে সরকারি সম্পদের ব্যবহার সুচারু ও সফল হয়েছে, সেই উদাহরণ অন্য জায়গায়ও প্রয়োগ করা হবে। এ জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জনগণের 'কণ্ঠস্বর' এবং তাদের 'সক্রিয় অংশগ্রহণ' প্রতিফলিত হয় এবং ধারাবাহিকভাবে চলতে পারে। এরফলে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হয়। স্থানীয় সরকার, কর্পোরেট এবং এনজিও’র এই যৌথ উদ্যোগ একটি সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এছাড়াও, কর্পোরেট গুলির সম্যক অভিজ্ঞতা লাভের একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে স্থানীয় সরকারের বাস্তবিক কর্মকাণ্ড।